ফেসবুক কেনার গল্প


সোশাল জগতে জীবনযাত্রায় বিশ্বায়ন এনেছে ফেসবুক। মানুষের জীবনের স্ট্যাটাস বেড়ে গেছে। বেড়েছে `লাইকের` তালিকা। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ফেসবুকের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন মানুষের। অতএব যার বাজারে দর আছে তার তো কদর থাকবেই। মাত্র ১০ বছরেই জুকারবার্গের পকেটে ইনকাম এসেছে প্রায় সাত বিলিয়ন আমেরিকান ডলার। এমত অবস্থায় ফরচুনের সম্পাদক ডেভিড কির্কপ্যাট্রিক তার লেখা দ্য ফেসবুক বইয়েতে একটি বিস্ফোরক তথ্য জানালেন। এই বই থেকে জানা যাচ্ছে শৈশব থেকে কৈশোরে ফেসবুককে কেনার অনেকবার অফার এসেছে। কিন্তু জুকারবার্গ কোনো প্রলোভনে পা দেননি।

কারা কারা ফেসবুককে কিনতে পা বাড়িয়েছিল তা নিচে তালিকায় দেয়া হলো:


১. অনামী নিউ ইয়র্ক কোম্পানি
২০০৪ সালে ফেসবুকের জন্মের চার মাসের মধ্যেই কেনার অফার আসে এক অনামী নিউ ইয়র্কের কোম্পানির কাছে থেকে। মাত্র চার মাসের শিশু ফেসবুক। আর পিতা জুকারবার্গের বয়স তখন ২০ বছর। জুকারবার্গ এই রকম একটি সোশাল মিডিয়ার জন্ম দেয়ার আনন্দে সেই কোম্পানির আবেদনকে কোনো কর্ণপাত করেননি। সেইসময় দশ লক্ষ মার্কিন ডলারে কিনতে চায় ফেসবুককে।

২. ফ্রেন্ডস্টার (http://www.friendster.com/)
ফেসবুককে বিক্রি করার দ্বিতীয় অফার আসে ফ্রেন্ডস্টার কোম্পানি থেকে। ফ্রেন্ডস্টারের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী জিম শ্যেইম্যান জানিয়েছেন, ২০০৭ তারা ফেসবুককে কেনবার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্রের মিলিত কোম্পানি, খুব ছোট্ট ও অনামী হওয়ায় তাদের কর্তৃপক্ষ থেকে শেষ পর্যন্ত তেমনভাবে সাড়া মেলেনি।

৩. গুগল
২০০৪ সালে জুকারবার্গ ও হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া কয়েক বন্ধু মিলে একটি বাড়ি ভাড়া নেন পালো অল্টোর কাছে। বেশ কিছুদিন পর গুগলের দুই কার্যনির্বাহী কর্তা সেখানে গিয়েছিলেন। কির্কপ্যাট্রিকের মতে গুগল অফার করেছিল ফেসবুকের সঙ্গে একসাথে কাজ করার। গুগলের এক সেলসম্যান কর্তা টিম আর্মস্টং জানাচ্ছেন, গুগল ফেসবুকের বিজ্ঞাপন নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও প্রকাশ্যে এমন কোনো তথ্য আসেনি বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।

৪. ভায়াকম (Viacom)
২০০৫ ফেসবুকের সঙ্গে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট কোম্পানির সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে কথাবার্তা চলছিল, ভায়াকম ৭৫ মিলিয়ন ডলার অফার করে ফেসবুককে কেনার জন্য। কিন্তু পরবর্তীকালে ফেসবুককে কেনার ঝুঁকি নেনিন ভায়াকমের প্রাক্তন প্রধান টম ফ্রেসটন।

৫. মাইস্পেস (Myspace)
ক্রিস ডিউল্ফ, মাইস্পেসের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কার্যনির্বাহী এক বক্তৃতায় বলেছিলেন জুকারবার্গের অফিসে গিয়েছিলেন ফেসবুক কেনার ইচ্ছা নিয়ে। সেইসময় জুকারবার্গ দাম দিয়েছিলেন ৭৫ মিলিয়ন ডলার। ক্রিস ডিউল্ফ তখন না করেছিলেন। কয়েকবছর পর আবার ফেসবুক কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করলে জুকারবার্গ আরও দাম চড়িয়ে দেন। দাম দেন ৭৫০ মিলিয়ন ডলার। তখনও না করলেন ডিউল্ফ।

৬. নিউস কর্প (NewsCorp, MySpace`s new parent company)
তারাও মাইস্পেসের মতো ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল ফেসবুকের কাছে।

৭. এনবিসি (NBC)
ডেভিড কির্কপ্যাট্রিক তার বইয়েতে বিশেষ কিছু জানাননি। তারাও যে ফেসবুক কেনার আগ্রহী ছিল শুধুমাত্র এমনই জানা গেছে।

৮. ইয়াহু! (Yahoo!)
২০০৬ সালে ফেসবুককে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার অফার করে ইয়াহু!। কিন্তু সেই সময় জুকারবার্গ সিদ্ধান্ত নেন ফেসবুকে নিউজ দেওয়া চালু করবে। তাতে ফেসবুক হিসাব করেছিল এক বিলিয়নের বেশি তারা মুনাফা লাভ করবে। সেইসময় এই অফার নাকচ করে দেয়।

পরবর্তীকালে ফের ইয়াহু অফার দেয় ৮৫০ মিলিয়ন ডলার। এই অফারকে না করতে দশ মিনিট সময় লেগেছিল ফেসবুকের।

৯. এওএল (AOL)
জনাথন মিলার, এওএলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ফেসবুক কেনার আগ্রহী করলেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেন নি।

১০. মাইক্রোসফ্ট
দুনিয়ার তাবড় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি মাইক্রোসফ্টের প্রাক্তন প্রধান স্টিভ বালমার জুকারবার্গকে বলেছিলেন, "১৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে তোমায় কেন কিনব?"

ফেসবুক বরাবর চেষ্টা করেছিল গুগল থেকে দুরে থাকার। এই কারণে বালমার অফার দিয়েছিল ফেসবুককে শেয়ার বিক্রি করার। কিন্তু বালমার জানত, জুকারবার্গ কখনই ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া করবে না। তাই তাকে বলেছিলেন প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর পাঁচ শতাংশ করে শেয়ার কিনবেন। ফেসবুককে পুরোপুরি নিতে সময় লাগবে পাঁচ থেকে সাত বছর। অবশেষে তারা মাত্র ১.৫ শতাংশ শেয়ার কিনতে পেরেছিলেন।

0 Comment "ফেসবুক কেনার গল্প"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Thank you for your comments